মে ২৯, ২০২৩, ০৯:১৩ পিএম
পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ ভারতে বিপুল তরুণ জনসংখ্যার অর্ধেকই বেকার, যাদের কর্মসংস্থান না হলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে অস্থিরতা; আর এই পরিস্থিতিকে তুলনা করা হচ্ছে টাইম বোমার সঙ্গে।
যারা বয়সে তুলনামূলকভাবে তরুণ ও বয়স ক্রমশ বাড়ছে ভারতে এমন কর্মক্ষম জনসংখ্যা আগামী দশকে একশ কোটি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদেরই একজন, সুনীল কুমার। স্বপ্ন পূরণের জন্য যে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে সেটা তিনি বেশ ভালোভাবেই জানেন। ভারতের হরিয়ানার বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী এই যুবকের ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি রয়েছে, এখন আরেকটি ডিগ্রির জন্য শ্রম দিচ্ছেন। এসব কিছু তিনি করছেন বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল এ অর্থনীতির দেশে ভালো বেতনের একটি চাকরির জন্য।
সিএনএনকে সুনীল বলেন, "আমি পড়ালেখা করেছি জীবনে সফলতা পাবার জন্য। কেবল কঠোর পরিশ্রম করলেই আপনি চাকরি পেতে সক্ষম হবেন।"
এখন সুনীলের একটি চাকরি আছে, তবে সেটা তার পড়ালেখার উদ্দেশ্য পূরণ করেনি বা যে চাকরির স্বপ্ন তিনি দেখেন, সেটিও তা নয়।
সিএনএন প্রতিবেদনে বলা হয়, গত পাঁচ বছর সুনীল তার গ্রামের একটি স্কুলের মেঝে ঝাড়ু দিয়েছেন। পাশপাশি অল্পবয়সী শিশুদের পড়িয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে তার যে আয় হয়, মার্কিন ডলারে তার পরিমান ৮৫ ডলারের মতো। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর বিনিময় মূল্য ১০ হাজার টাকারও কম।
সুনীল সিএনএনকে জানান, এই উপার্জন খুব বেশি কিছু নয়। বিশেষ করে তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও এক বোনকে দেখতে হয়। কিন্তু তার সামনে এখন উপার্জনের এই একটি পথই কেবল রয়েছে।
তার কথায়, একজন শিক্ষক হয়ে ডিগ্রিগুলো কাজে লাগানোর কথা ছিল তার। কিন্তু তার বদলে নিজের পেট চালাতে তাকে কায়িক শ্রমও দিতে হচ্ছে।
সিএনএন তার প্রতিবেদনে বলছে, সুনীলের এই দশা ভারতের জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়। দেশটির লাখ লাখ তরুণের দুর্দশার চিত্র এটি। ভারতে যুব বেকারত্ব তীব্রভাবে বেড়ে চলেছে, যা দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মুহূর্তে ঝুঁকি তৈরি করছে।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ বলছে চীনকে টপকে এই মূহুর্তে ভারত শীর্ষ জনসংখ্যার দেশ। সিএনএন জানায়, আর চীনের জনসংখ্যা কমে বয়স্ক জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে ভারতের নতুন অবস্থান বিশ্ব অর্থনীতিতে তরুণ শক্তির আশা জাগিয়েছে। ভারতের কর্মক্ষম জনসংখ্যা বয়সে তুলনামূলকভাবে তরুণ, যাদের সংখ্যা বাড়ছে এবং আগামী দশকে তা একশ কোটিতে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বিপুল শ্রমশক্তি এবং বিশাল বাজারকে ‘অর্থনৈতিক মিরাকল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের এক কর্মকর্তা।
এই `মিরাকল` কে সিএনএন বলছে `মোহভঙ্গ`
প্রতিবেদনে সিএনএন বলে, সুনীলের মত ভারতীয় তরুণদের জন্য তথাকথিত এই মিরাকলের আরেকটি দিক হলো সেখানে চাকরি খুবই কম এবং প্রতিযোগিতা তীব্র।
বলা হয়, যেখানে ভারতে ২৫ বছরের নীচে জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ সেখানে এই ৪০ শতাংশের প্রায় অর্ধেক বা ৪৫.৮ ভাগ বেকার (ডিসেম্বর ২০২২)।
সিএনএন জানায়, বিশ্লেষকদের অনেকেই এই বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীকে `টাইম বম্ব` হিসেবে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, অচিরেই কর্মসংস্হান করতে না পারলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
সাবেক বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ড. কৌশিক বসু সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারতে বেকারত্ব `শকিংলি হাই` বা `জগন্যরকমের উচ্চহার`।
বসু বলেন, এই বেকারত্ব আস্তে আস্তে বেড়েছে দীর্ঘ সময়ে গত ১৫ বছরে। কিন্ত এখন এসে এ সংখ্যা বিশাল হয়ে পড়েছে।
(সিএনএন থেকে নেয়া প্রতিবেদনের বাংলা প্রতিলিপি)